article-02 [ Mashrafi Mahin]

04.02.2023

দিন শেষে আমি যখন একটা বিরক্তিকর অধ্যায়

আজকে আমি আমার জীবনের একটি গল্প শেয়ার করব। আশা করি পুরো গল্পটি পরবেন এবং আমার করা ভুল গুলো থেকে নিজেকে অবশ্যই সাবধান করেন নিবেন। গল্পটা বেশি দিনের নয়। সবে মাত্র এস.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। আমার গ্রেড পয়েন্ট ৫.০০। সুতরাং আমার রেজাল্ট-এ আমার বাবা, মা সহ পাড়া-প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজনরাও খুশি। এখন আমার প্রাইভেট শুরু করার পালা। কারণ আমাদের ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ে এবার সময় খুব কম। তাই আর দেরি না করে যথারীতি আমি যেই টিউটর এর কাছে গণিত পড়েছিলাম, তার কাছেই গেলাম এবার নতুন করে ইন্টারমিডিয়েট এর গণিত বই নিয়ে। তখন সবে মাত্র রেজাল্ট দিয়েছে বলে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক খুশি ছিল। তাই কেইউ তেমন প্রাইভেট শুরু করার আগ্রহ দেখায়নি। যাহোক এর মধ্যেও আমি সহ বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী শুরু করলাম প্রাইভেট ব্যাচ। আমার এখনও মনে পড়ে প্রথমেই আমরা ম্যাট্রিক্স নামক অধ্যায় শুরু করি। এরপর আস্তে আস্তে আরও দুইটা অধ্যায় শেষ করে ফেলি। এর মধ্যেই তখন ডিসেম্বর মাস শেষ হবে হবে। সুতরাং এখন তো আরও নতুন ছাত্রছাত্রী আসবে। আমি এটা অনুমান করেছিলাম নতুন ছাত্রছাত্রী এলে হয়তো স্যার আমাদের ব্যাচ-এর সাথে ওদের পড়াবে এবং আমাদের অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষন না পর্যন্ত তাদের ওই অধ্যায়গুলো শেষ হয় , যেগুলো আমাদের শেষ হয়ে গেছে। দিনটা হয়তো হবে ০৫-জানুয়ারি কি ০৬-জানুয়ারি হবে, আমাদের ব্যাচের সবাইকে স্যার বললেন, নতুন আশা ছাত্রছাত্রীদের সাথে আমাদের পড়তে হবে। কেউই তেমন একটা বিরোধিতা না করলেও আমি একটু বিরোধিতা করলাম। এটা স্বাভাবিক ছিল, কেননা কোনো ছাত্রই এভাবে কারো জন্য বসে থাকবে না। যদিও আমি বিরোধিতা করেছিলাম, তবুও পড়া শেষে স্যারের কাছে বলেছিলাম, একটু বেশি বলে ফেলেছি স্যার, স্যার যেন কিছু মনে না করেন। স্যার আমাকে বললো, এইরকম হতেই পারে।
স্যারের এইরকম বলার কারণও আছে। কেননা আমার বাবাও একজন টিচার। সবথেকে মজার ব্যাপার হলো, আমার বাবা এবং স্যার-এর মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো। সেই সূত্রে স্যার আমাকে ভালোভাবেই চিনতেন। যাহোক এখন আর সেদিকে না যাই।
পরের দিন থেকে যথারীতি ওদের সাথে আমাদের পড়ানো শুরু করলেন স্যার। কিন্তু ওরা ছিলো একদমই নতুন। যার ফলে তাদের খুব একটা সুবিধা হচ্ছিলো না। তারা স্যারকে বলাতে স্যার আমাদের অপেক্ষা করতে বললেন দুইদিন। তারপর আমাদের আর কোনো অসুবিধা হবে না বলে আশ্বাস দিলেন স্যার। আমি মেনেও নিলাম। কিন্তু দুইদিন পর দেখলাম ওদের এখনো হয়তো পনেরো দিন বা তারই বেশি সময় লাগবে। আমি বুঝেই নিলাম, আমার হয়তো অনেক সময় তাদের জন্য উৎসর্গ করা লাগবে। সুতরাং আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি বেশ কয়েকদিন যাবো না প্রাইভেটে। যেই পরিকল্পনা সেই কাজ। বেশ কয়েকদিন যাওয়া হয়নি আমার। কিন্তু আমার বাবা এই বিষয়টা মোটেও জানতেন না। হঠাৎ একদিন তিনি আমাকে বাসায় বসে থাকতে দেখে সন্দেহ করলেন। যা আমি ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। তিনি আমাকে রেগে বললেন, আজকে আমি কেন প্রাইভেটে যায়নি। আমি সব ঘটনা খুলে বললাম। ঘটনা শুনে তিনি যে স্যারকে ফোন দিয়ে কি যে বললেন আমি তা মোটেও জানি না। সেদিন ঠিক সন্ধ্যার পর তিনি আমাকে এই বিষয় নিয়ে অনেক বকাঝকা করলেন। পরদিন আমি জানতে পারি আমার বাবা স্যারকে ফোন করেছিলো। যাহোক তারপর স্যার আমাকে প্রাইভেটের মধ্যেই বললেন, আমার গণিতের দায়িত্ব তিনি নেবেন। এই নিয়ে অনেকবার হলো এই কথাটা তিনি আমাকে বলেন। আরও বললেন যে তিনি নাকি আগামী দিন নতুন কিছু শিখাবেন। আমি শুনে বেশ খুশিই হয়েছিলাম। কিন্তু পরেরদিন যেয়ে দেখি তিনি আগের গুলোই শেখাচ্ছেন।
জীবনে প্রথমবার পড়াশোনা নিয়ে সেদিনই অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। এখন আপনারা বলতে পারেন, একই জিনিস দুইবার করলে সমস্যা কি? বরং আরও ভালো জানা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি… কিন্তু বিষয়টা একদমই তেমন না। আমি পরিষ্কার করে বলছি।
আমাদের ওই টপিকগুলো শেখানোর পর দুইবার পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সুতরাং এটা স্পষ্টই যে কোনো ছাত্র যদি একই অধ্যায় দুইবার পরীক্ষা দেয় তাহলে সেই অধ্যায় নিয়ে তার কোনো ঝামেলাই থাকতে পারেনা। যাহোক এটা দেখার পর আমি স্যারকে বললাম, আমাদের আগের ব্যাচ আর নতুন ব্যাচ আলাদা করে পরাতে। কিন্তু তিনি কথা কানেই তুললেন না। আমি সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম অনেক কিছু। এরপর তিনি এইভাবে প্রায় একমাস কাটিয়ে দিলেন। আর আমরা পরেই রইলাম। আগাতেও পারলাম না , না পারলাম কিছু করতেও। কারণ অন্য কোথায় গেলেও তো ধরতে পারবো না পড়া। সুতরাং জীবনে প্রথমবার এইরকম পরিস্থিতিতে পরার পর বুঝতে পারলাম ডিপ্রেশন কাকে বলে। বলতে পারেন পুরো একমাস ডিপ্রেশনে ছিলাম। যার ঘানি টানতেও হয়েছে অনেকদিন ধরে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই পড়াশোনায় একটা ব্যঘাত ঘটছিলো। যাহোক এই একমাস আমার অনেক সময় নষ্ট হয়েছিলো যার জন্য আমি খুবই চিন্তায় ছিলাম। আর এতদিন স্যারকে কিছুই বলিনি শুধু আমার বাবার অনেক কাছের একজন বলে। শুধু মুখ বন্ধ করে বসে ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিলো না। এইভাবে স্যার আমার সময় নষ্ট করেছিল যার ফলাফল আমি নিজেই টের পেয়েছি। অনেক কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু আমি জানি এই ডিপ্রেশনের কোনো মূল্যই নেই। কারণ ভুলটা আমারই ছিল।
এরপর হঠাৎ একদিন আমার আর এইসব ভালো লাগছিলো না। তাই স্যারকে বলেই ফেললাম যেন তিনি আমাকে ছুটি দিয়েদেন যতদিন না পর্যন্ত ওই অধ্যায় গুলো শেষ হয়ে যায়। স্যার বললেন , ঠিক আছে। আমি বের হয়ে আসার পর দেখলাম আরও তিনজন বের হয়ে আসলো , যারা প্রথম থেকে শুরু করেছিলাম। তারপর আমাদের কথা হয় এবং আমরা তখন এবার স্যারকে স্যারকে ডেকে বলি, আমাদের অবস্থা সম্পর্কে। স্যার আমাদের ডিরেক্ট বলে দিলেন আমরা যান অন্য কোনো স্যার এর কাছে চলে যাই।
তাহলে আপনারাই বলুন আমাদের আগে আগে শুরু করে বরং অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর স্যারই বা কেন বলেনি যে আমরা জানুয়ারি থেকে পড়া শুরু করি। এইভাবে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গিয়েছে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না।
আমি কিন্তু সেই স্যারটার কোনো দোষ আপনাদের বলিনি। স্যার ছিলেন খুব ট্যালেন্টেড এবং সর্বোপরি ভালো মানুষ। স্যার যেনো কখনো কারো দ্বারা অসম্মানিত বা কোনো খারাপ কিছু না হয় সেই কামনা করি সর্বদা। আমি আপনার কতটুকু বোঝাতে পেরেছি জানি না। কিন্তু আপনাদের বোঝা উচিৎ আপনি বা আপনাই ভাই/বোন অথবা আপনার সন্তানকে কোন শিক্ষকের কাছে ভর্তি করাচ্ছেন এবং তারা কতটুকু শিখতে পারছে বা তাদের সময়ের ব্যবহার তারা করছে নাকি সেই শিক্ষক করছেন। বিশেষ করে বলছি যারা ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হয়েছে তাদের জন্য। কারণ তাদের ক্ষেত্রে আমি মনে করি এই কন্টেন্টটি অনেক জ্ঞান দান করবে। পরিশেষে বলতে চাই, আপনি যা করবেন তা বুঝে শুনে করবেন, যেন পরবর্তীতে তা আপনার জন্য ক্ষতিকর না হয়।
আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই পুরো আর্টিকেলটি ধৈর্য পড়ার জন্য …

©Article arranged & written by
Mashrafi Mahin